বাইক এক্সিডেন্ট পর্ব -৩ (শেষ)

সীতাকুণ্ড মডার্ন হাসপাতালে মহিরে  প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করল, থুতনি ও ঠোটের মাঝামাঝি স্থানে বেশ গর্ত হয়েই কেটে গেছে, ওখান থেকেই রক্ত বের হইছিল,একটু  টেনশন মুক্ত হলাম যে,কান দিয়ে রক্ত বের হয়নাই, আলহামদুলিল্লাহ তার মাথায়ও আঘাত লাগে নাই, সেলাই করা হল কাটা স্থানে, কাটা ছাড়াও মহির শরীরে যখম হয়েছে ( বাহু ও বক্ষে), শারীরিক আঘাত বা যখমের জন্য মনে হয় ওদের কোন প্রাথমিক চিকিৎসা নাই,  আমারও যেহেতু কোথাও কাটা ছিড়া নাই, আমার জন্যও প্রাথমিক চিকিৎসাও নাই, ব্যাথায় মাথা সহ ঝিম ঝিম করছিল, মহির ড্রেচিন শেষ হল তখন প্রায় সাড়ে ৩টা বাজে, আমাকে এক্সরে করানো হবে জানানো হল, অনেক বলে কইয়ে ব্যাথার একটা ইঞ্জেকসান দিয়ালাম,আর সহ্য হচ্ছিলনা তখন।


.
ইমার্জেন্সি রুম থেকে ৪রুম পরেই  এক্সরে রুম, এক্সরে করতে গিয়েই বুঝতে পারলাম হাসপাতাল টা যতটুকু বাজে মনে করছিলাম তার চাইতেও নাজুক অবস্থা, এক্সরে রুমে যাওয়ার জন্যও স্ট্রেচার পাইলাম না, আমাদের বহন করে আনা ট্রাকের ড্রাইভার ভাইটি ও তার হেল্পারের কাধে ভর করে যাওয়ার সময় যে পরিমান ব্যাথা পেলাম, তা বলে ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব না, অসহ্যনীয় ব্যাথা পুরা ঘেমেই গেছি,ওদের কোন দোষ নাই, ডান হাত দিয়ে একজনের কাধে ঝুলে ব্ল্যালেন্সহীন ভাবে যাচ্ছি,বাম হাতেও নাড়াচাড়া করার সুযোগ নেই, বাহুর জয়েন্টেও ফ্রেকচার, একজন আহত শারীরিক ব্ল্যালেন্সহীন মানুষকে দুইজনের পক্ষে সমান্তরালে নেয়া অনেক কষ্টের,একজন মোটামুটি লম্বা ও মধ্যবয়স্ক   অন্যজন (হেল্পার) এখনো বাচ্চায় বলা যায় বয়স ১৬-১৭ হবে, ওদের সাহায্যেই তো এক্সিডেন্ট প্ল্যাস থেকে গাড়িতে উঠানামা সব করলাম, আল্লাহতালার কাছে পরিয়াদ করছি উনাদের উত্তম যাযা দান করুন! (আমিন)।


.
এক্সরের কাজ শেষ হল, নড়বড়ে একটা হুইল চেয়ারে করে এক্সরে রুম থেকে বেরিয়ে আসছি ( গরম হয়ে ঝাড়ি দেয়ার পর কই থেকে যেন হুইল চেয়ারটা নিয়ে আসল) এরই মধ্যে চাচাত ভাই ইয়াছির তার এক বন্ধু জামাল সহ হাসপাতালে চলে আসল, একটু পর নাছির ও মহির পরিচিত আবছার নামের অন্য একজন সহ আসল, বড় ভাই মুসলেহ উদ্দিন বদ্দা এখনো আসেলেন না! পরে জানতে পারলাম উনি গ্রামেই ছিলেন, ফোন পাওয়া মাত্র টাউনের উদ্দ্যেশ্য রওনা দিছেন, ছালাহ উদ্দীন ফোন দিয়ে জানাল যে,সে সহ শাহেদা আপা ও মাহদি আসতেছে ওরা সিটি গেইটে পৌছাল,বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে গাড়ী গেছে,গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করলে দেরী হয়ে যাবে, তাই বাধ্য হয়ে CNG নিয়ে সিটি গেইট এরপর CNG এলাউ না, লোকাল বাসে ঝুলে আসতে হবে, কিছুই করার নাই ওরা ঐভাবেই আসল,ইতোমধ্যে আমাদের নেয়ার জন্য এম্বুলেন্সও চলে আসছে, আমি,মহি,শাহেদা আপা,সালাহ উদ্দিন ও মাহদি এম্বুলেন্স করে রাওনা দিলাম,কোথায় যাচ্ছি ঠিক জানি না, বাকিরা বাইক উদ্ধার করার জন্য পুলিশ ফাড়ি গেল।


.
সময় তখন মাগরিবের পর হয়ে গেল,আমাদের এম্বুলেন্স মেট্রোপলিটন হাসপাতালে এসে থামল, আমরা পৌঁছানোর আগেই অর্থপেডিক ডাক্তার এপয়েন্টমেন থেকে শুরু করে হসপিটাল ম্যানেজ ঝামেলার কাজটা #জালাল_উদ্দীন বদ্দা একাই সামাল দিলেন, যে কয়দিন হসপিটালে ছিলাম, মনে হয়না উনি ঠিক মত অফিস করতে পারছিলেন, একটু পরপর খুজঁ নেয়া, বড় ভাই #মুসলেহ_উদ্দিন বদ্দার সাথে পরামর্শ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই উনি ছিলেন,শ্রদ্ধা ভরা কৃতজ্ঞতা রইল, প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নাই। তখন সবাই টেনশনে ছিলেন, ডাক্তার বলছেন ইমার্জেন্সিতে অপারেশন করাতে হবে ঢাকা এপ্যালো হাসপাতাল সাজেস্ট করছিলেন ডাক্তার, আত্মিয় স্বজনরা একে একে তাঁদের গুরুত্ব পূর্ণ কাজ ফেলে চলে আসছেন। সবারই একটা কথা "টেনশন করিও না,সব ঠিক হয়ে যাবে", কিন্তু সবার চোখে মুখে টেনশনের চাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সে দিনের পর থেকে পুরা ফ্যামিলি, আত্মীয় ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের টেনশনের মধ্যে ফেলে দিলাম, বিশেষ করে ছোটদের ( সালাহ উদ্দিন, জিহান, জিয়াদ, মাশকুর) কষ্ট দিচ্ছি, ওদের জন্য তখন ম্যাবি রাত-দিন এক,কখন না জানি এটা লাগবে,ওটান আন বলে ডাকি, আরো অনেক কে ফোন করে বলি, ভাই আমার ঐ জিনিসটা লাগবে একটু কষ্ট করে ম্যানেজ করে দেয়া যাবে কি! হয়তো অনেকই ব্যাস্ত ছিলেন, উল্টো ঝামেলার মধ্যে তাদের বিব্রত করে ফেলছি ।
.
প্রায় ৩/৪ মাস টানা রেস্টে থাকতে হল, প্রথম ২মাস কি ভাবে কাটছে একমাত্র ভুক্তভোগী না হলে বুঝা অসম্ভব, এক শোয়াতেই কোন রকম এইপাশ ওপাশ হওয়ার উপায় ছিল না ব্যাথার তীব্রতায়, আলহামদুলিল্লাহ এখন সুস্থ আছি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেছি, তবে বেশি হাটাচলা করলে কোমরে ব্যাথা হয়, দোয়া কামনা রইল।

.
মাআসসালাম। 

Comments

Popular posts from this blog

বাইক এক্সিডেন্ট - পর্ব -১

সাইকোলজিক্যাল থিঙ্কিং

বাইক এক্সিডেন্ট পর্ব -২